Bangla SMS

Beti Bachauu Story In Bangla – – মা কি হয়েছে? কাঁদছো কেন?

– মা কি হয়েছে? কাঁদছো কেন?
– কিছু না রে সোনা। বড্ড কষ্ট হচ্ছে রে মা।
– ওরা কেউ আমাকে চায় না, না?
– নাঃ রে। ওরা মেয়ে চায় না।
– মা তুমি ওদের বলো না আমি ওদের খুব ভালোবাসবো, বড় হয়ে ওদের খুব আদর যত্ন করবো, ওনারা যা বলবেন শুনবো, কোনো কষ্ট দেবো না। তাহলেও ওরা আমায় আনবে না?
– ও মা কি হল? আরে ও মা কেঁদো না। আমার জন্য কত কষ্ট তোমার। দুদিন আগেও দেখো সব ঠিক ছিল। তুমি, আমি, বাবা একসাথে ছিলাম। বাবা কত্ত আদর করতো আমায়। এখন তো আমার জন্য তোমাকেও আদর করে না। আমার খুব খারাপ লাগছে, খুব কষ্ট হচ্ছে। মা আজ ডাক্তার যে ওষুধটা দিয়েছে খেয়ে নাও। কেঁদো না তুমি।
– কান্নাভেজা মায়ের কন্ঠস্বর বলে উঠলো জানিস তুই কিসের ওষুধ ওটা? ওটা আস্তে আস্তে তোর ছোট্ট শরীরটা গলিয়ে দেবে আর কাল সকালেই তুই আমার থেকে আলাদা হয়ে যাবি। তোর ছোট্ট হাত পা গুলো, ছোট্ট হার্টটা সব গলে জল হয়ে যাবে।
– হয়ে যাক মা। কোন কষ্ট হবে না আমার। সব সহ্য করে নেব আমি। তবে তোমাকেও কথা দিতে হবে কিন্তু তুমি তোমার ছেলের থেকে আমাকেই বেশি ভালোবাসবে। আমিই কিন্তু তোমার সবচেয়ে প্রিয়। আমিই তো তোমার প্রথম বলো।
এই বলে স্বরুপা দেবী থামলেন একটু। কান্নায় গলা বুজে আসছে। এক টানা কথা বলতে গেলেই হাঁফ ধরেযায় আজকাল। প্রীতি তাঁর বুকে মাথা রেখে তাকে জড়িয়ে আছে ছলছল চোখে। আগলে নিলেন নিজের কাছে।
বড্ড ভালো মেয়েটা। পাঞ্জাবী পরিবারের মেয়ে অথচ কত সুন্দর মানিয়ে গুছিয়ে নিয়েছিল সংসারে। সুমন এর চোখে মুখেও খুশি ঝিলিক দিত। সুমন যেদিন প্রথম বাড়িতে বলেছিল সুমনের বাবা, ঠাকুমা, পিসিমনি সবাই নাক কুঁচকে ছিল। কিন্তু জেদ ছাড়েনি ও। ওই মেয়েই আসবে। সুমনের ভালোবাসার থেকেও হয়তো জেদের জোর অনেক বেশি ছিল।  তাই পরের অগ্রহায়নেই চন্ডীগড়ের ভট্টল পরিবারকে কলকাতায় উড়িয়ে এনে চার হাত এক করেছিলেন।
কপালের দোষ। বিয়ের দুবছরের মধ্যেই সুমন হার্টের অসুখে গত হল।
মা বাবা মেয়েকে নিয়ে যেতে এলেও পাগল মেয়েটা গেলনা।
চোখের জলে ভিজে থাকা একটা মুখ আর কত সহ্য করা যায়। জোর করে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন বাপের বাড়ি। নিজের লোকেদের কাছে আনন্দে থাকুক। তাতেও শান্তি নেই। মেয়ের রোজ ফোন করা চাই।
পুজোতেও আসে। এক মাস বুড়ো বুড়ির সাথে কাটায়। এবছরও এসেছে।
ওর মা বাবা নিয়ে যাবে ওকে কাল। ওরা চায় আবার বিয়ে দিতে।
সুমনের বাবাকে বলেছিল সেদিন। কানে এসেছিল দু একটা কথা।
মনটা তারপর থেকেই বড্ড হুহু করছে। তাহলে এটাই কি শেষ আসা!
আজও দুপুরে খাওয়া দাওয়ার পর কিছুক্ষণ ওঘরে শ্বশুরের সাথে টিভি দেখতে দেখতে ইষ্টবেঙ্গলের হয়ে গলা ফাটাল তারপরই এসে জড়িয়ে পাশে শুলো।
একথা সেকথা হতে হতে হঠাৎ ই মনের কোণায় জমে থাকা একটা কষ্ট বাইরে এনে ফেলেছিলেন।
আজ রাতটাই শেষ। কাল বিকেলের ট্রেন।
মা বাবাও যেভাবে বিয়ের জন্য জোর করছে কে জানে এটাই শেষ আসা কিনা। রাতে শুয়ে শুয়ে প্রীতির
চোখে কত দৃশ্য ভেসে উঠছে।
লাল লেহেঙ্গা, টোপর পরা সুমনের ক্যাবলা হাসি, মালা বদল, প্রথম ইলিশ মাছ রান্না, আলতা পরা, পায়েস বানানো, শাড়ী পরা আর সব কিছুর সাথে একটা স্নেহমাখা ভালোবাসা।
দুপুরবেলায় শোনা কথাগুলো আর মা এর সেই কান্না তোলপাড় করে দিচ্ছে মনটাকে।
আস্তে আস্তে ফোনটা হাতে তুলে নিল।
অপরপ্রান্তের অনেক অনুরোধ উপরোধেও এপ্রান্ত একটুও নরম হলনা।
ফোনটা ছাড়ার পরই আশ্বস্ত হল বরং।
এখনও কানে ভাসছে একজন মা আর তার ছোট্ট মেয়ের কথাগুলো।
এজন্মে তো তোমার আদর পেলামনা পরের জন্মে আবার আসব। তখনও ফিরিয়ে দেবে না তো?
না রে মা। পরের জন্ম তো অনেক দেরী। এজন্মেই তো তোকে চাই।
যে ছেলের জন্য আজ তোকে যেতে হচ্ছে, রাজরানীর মত সেই ছেলের হাত ধরেই ফিরিস।
ধীর পায়ে স্বরূপাদেবীর কাছে গিয়ে আবারও বুকে মাথা রাখলো প্রীতি।
আর কোত্থাও যাবো না মা। এবার আর কেউ আমার মন গলাতে পারবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *